আজ থেকে বাংলাদেশ নিউক্লিয়ার ক্লাবের ৩৩তম সদস্য
বিশেষ প্রতিবেদক ||
দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র পাবনা জেলার ঈশ্বরদী উপজেলার রূপপুরে। ২০২৪ সালের মার্চে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিটে ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করার কথা রয়েছে। আর দ্বিতীয় ইউনিটেও ২০২৫ সালের মাঝামাঝি সমপরিমাণ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু আশা করা হচ্ছে। প্রকল্পটির উৎপাদিত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সংযুক্ত হবে। এর ফলে দেশের বিদ্যুৎ ঘাটতি পূরণে উল্লেখযোগ্য রাখবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এই পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিটের জন্য রাশিয়া থেকে ‘ফ্রেশ নিউক্লিয়ার ফুয়েল’ বা ইউরেনিয়াম আনা হয়েছে। আজ ইউরেনিয়াম জ্বালানির যুগে প্রবেশ করছে বাংলাদেশ, গড়বে নতুন ইতিহাস।
বুধবার (৪ অক্টোবর) প্রকল্প পরিদর্শনে এসে প্রকল্প পরিচালক ড. শৌকত আকবর বলেন, বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিটের সামগ্রিক কাজের প্রায় ৯০ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। দ্বিতীয় ইউনিটের কাজের অগ্রগতি হয়েছে ৭০ শতাংশ।
তিনি আরও জানান, নিউক্লিয়ার জ্বালানি আসার পরই রূপপুর পারমাণবিক স্থাপনা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। বাংলাদেশ এখন নিউক্লিয়ার ক্লাবের ৩৩তম সদস্য হতে যাচ্ছে। আগামী বছরের সেপ্টেম্বরে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরু হবে। এর প্রায় ১০ মাস পর বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনে যাবে।
এদিন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান বলেন, ২০২৫ সালের শুরুতে রূপপুর থেকে বিদ্যুৎ পাবে দেশের জনগণ। সঞ্চালন লাইনসহ অন্যান্য অবকাঠামো তৈরি হওয়ার পরই পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরু হবে। উত্তরবঙ্গের পিছিয়ে পড়া জনগণ এই প্রকল্প থেকে উপকৃত হবে। পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি জিডিপিতে ২ শতাংশ অবদান রাখবে।
বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে রাশিয়া থেকে ইউরেনিয়াম আসার মধ্য দিয়ে পারমাণবিক স্থাপনার স্বীকৃতি পেয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল এটোমিক এনার্জি কমিশনের (আইএইএ) গর্ভনিং বডির সদস্য নির্বাচিত হয়েছে।
একটি নিউক্লিয়ার প্লান্ট নির্মাণে সাধারণত ১২-১৫ বছর সময় লাগে উল্লেখ করে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান বলেন, সেই বিবেচনায় মাত্র ৭-৮ বছরের মধ্যে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ একটা মাইলফলক। এটি সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মাধ্যমে।
১৯৬১ সালে রূপপুরে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হলেও গতি পায় ২০০৮ সালের পরে। তখন নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ইশতেহারে আওয়ামী লীগ রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করে। ২০০৯ সালে দলটি ক্ষমতায় আসলে দ্বিতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হন শেখ হাসিনা। তিনি প্রকল্পটি বাস্তবায়নে রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তি করেন।
২০১৩ সালের অক্টোবরে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন শেখ হাসিনা। ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয় নিয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে প্রকল্পটির নির্মাণকাজ এগিয়ে নেয়। ২০১৭ সালের ৩০ নভেম্বর ১ হাজার ৬২ একর জমির ওপর প্রকল্পের পূর্ণোদ্দমে কাজ শুরু হয়। ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে দুটি ইউনিট রয়েছে। প্রকল্পের আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতা করছে রাশিয়া। প্রকল্পটির নির্মাণকাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে, নির্ধারিত সময়ে চালু করা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।